শিরোনাম

এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত পাহাড়ি এই জনপদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২২, ০৮:৫৮ রাত
আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২২, ০৮:৫৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

আঁকাবাঁকা পাহাড়ি মেঠোপথে স্কুলে যাওয়া। দুর্গম এ পথ কারো জন্য ঘণ্টাখানেকের, আবার কারো জন্য কয়েক ঘণ্টার। এ চিত্র জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি জনপদের। ফলে স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগব্যবস্থায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে ক্ষুদ্র-নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর প্রায় তিন হাজার মানুষ।

নানা প্রতিকূলতার কারণে এই এলাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে স্কুলবিমুখ শিক্ষার্থীর সংখ্যা। আর অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পাহাড়ি এই অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও তাদের জন্য রয়েছে নামমাত্র সরকারি সুযোগ সুবিধা। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগব্যবস্থায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে এই জনপদের বাসিন্দারা। 


 
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চল বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন। জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তরে এই পাহাড়ি জনপদে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে গারো সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ।

ক্ষুদ্র-নৃ-তাত্বিক এই জনগোষ্ঠীর মানুষ কাজের সন্ধানে শহরমুখী হওয়ায় তাদের অধিকাংশ শিশু এখন স্কুলবিমুখ। তাই অনেকটাই অন্ধকারে রয়েছে গারো সম্প্রদায়ের অধিকাংশ পরিবার। চিকিৎসা সেবায় কোনো কার্যক্রম না থাকায় স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে পাহাড়ি অঞ্চলের এই বাসিন্দারা। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা-ঘাটের কোনো কাজ না করায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গারো সম্প্রদায়ের এই বাসিন্দাদের। বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের সাতানিপাড়া, সোমনাথপাড়া, দিঘলাকোনা, টিলাপাড়া, বালিঝুড়ি, গারোমারা, হাতিবেরকুনা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।

দিঘলাকোনা গ্রামের বাসিন্দা পায়েল খকসি বলেন, আমাদের জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একটি মাত্র জুনিয়র স্কুল। এখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা যায়। তারপর পড়তে যেতে হয় কামালপুরে। যা আমাদের অঞ্চল থেকে পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। তাই আমাদের এলাকার বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

একই গ্রামের নবদূত মারাক বলেন, দেশ স্বাধীনের পর কত সরকার এলো-গেল। তাদের দিকে কেউ তাকালো না। এই অঞ্চলের উন্নয়নে আজ পর্যন্ত কেউ এগিয়ে এলো না। চলাচলের রাস্তাগুলো গত ৪০ বছরেও কোনো উন্নয়ন বা সংস্কার করা হয়নি।

দিঘলাকোনা গ্রামের স্যার আন্দ্রে বেসেট্ট জুনিয়র স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিশুশ্র শোভা দাস ঢাকা মেইলকে বলেন, তার এই স্কুলে ৪-৫শ’  শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও আছে ১১০ জন। আর্থিক অভাব ও কাজের সন্ধানে শহরমুখী হওয়ায় ছেলেদের সংখ্যা খুবই কম। আর প্রাথমিকে মেয়েদের অংশগ্রহন চোখে পড়ার মতো থাকলেও মাধ্যমিকে এর সংখ্যাটাও খুবই কম। ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে আদিবাসীদের মাঝে  শিক্ষার হার কম থাকায় এখনও অজ্ঞতার অন্ধকারে রয়েছে তারা।

ক্ষুদ্র-নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নেতা ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি পিটিশন সাংমা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের গারো উপজাতিরা খুবই কষ্ট করে বসবাস করে। বিলাসিতা দূরে থাক, মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত এই সম্প্রদায়ের মানুষ। তাই অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও  যোগাযোগ ব্যবস্থায় পিছিয়ে থাকা আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা থাকায় অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষদের। শুকনো মৌসুমে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তায় কোনোভাবে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এই রাস্তা। এতে বেড়ে যায় দুর্ভোগের মাত্রা। অবহেলিত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এক সময় আদিবাসী শূন্য হয়ে পড়বে পাহাড়ি এই এলাকা।’

 

দিঘলাকোনা গ্রামের সাধু আন্দ্রে ধর্মপল্লীর ধর্মগুরু ফাদার ডোমিনিক সরকার পিএসসি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আধুনিক যুগে যখন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের পাহাড়ি অঞ্চলের ক্ষুদ্র-নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। অসচেতনতা ও দারিদ্রতার কারণে গারো উপজাতির সন্তানদের শিক্ষার হার খুবই কম। জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত সংগ্রামে ব্যস্ত থাকা এই গারো উপজাতির স্বাস্থ্য সম্পর্কেও নেই তেমন কোনো  সচেতনতা।’

বকশিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মুনমুন জাহান লিজা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কমিটি করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। ক্ষুদ্র-নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সে বিষয়ে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, নিউজ টিপিবি এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়